E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ২১ মে, ২০২১ / ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮

যে আমারে চায়

বনবাণী ভট্টাচার্য


অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু।
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।


একি এক আকুল প্রার্থনা? না কি এক সঙ্গত দাবি? রবীন্দ্রনাথ বিপদে যেন নির্ভয় থাকতে পারেন, তার জন্যে হয়তো নত মস্তক হয়েছেন, কিন্তু নিজের শক্তিতে যা করার, যা পাবার, তার জন্যে নিজের চেষ্টাকেই তিনি উপায় বলে মেনেছেন চিরকাল।

রবীন্দ্রনাথ, ব্রিটিশ পদানত ভারতের শিক্ষার অকিঞ্চিৎকরত্বকে বিভিন্ন বক্তৃতা ও প্রবন্ধে ‘লজ্জার বিষয়’ বলে ধিক্কার দিয়েছেন, সাথে সাথে দেশের দুর্দশাগ্রস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তিনি আন্তরিক সমবেদনা বোধ করেছেন। ‘‘সেই বেদনা আমার বুকে বেজেছিল গভীর দুখে’’। বুকের মধ্যে সেই গভীর ক্ষত নিয়ে, কবি প্রতিকারে নেমে পড়েন। কলেরা-গুটিবসন্ত-প্লেগ যেন ক্রমাগত ভারতবর্ষকে তাদের স্থায়ী এক ভয়ঙ্কর লীলাক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিল। কবির মনে হয়েছিল মৃত্যু যেন এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত জুড়ে প্রাণকে ‘ব্যঙ্গ’ করছিল।

মডার্ন রিভিউ ১৯৫২ সাল ‘‘হিউম্যান ওয়েস্ট ইন ইন্ডিয়া’’ শিরোনামে, যে সারণি উপস্থির করে তাতে দেখা যায় -

রোগের নাম ১৯২২-৩১ ১৯৩২-১৯৪১ শতকরা
জ্বর ৩৭,০৩,৪৫৯ ৩৬,২২,৮৬৯ ৫৮.০৪
কলেরা ২,২৫,১৮৭ ১,৪৪,৯২৪ ৯২.০৪
গুটিবসন্ত ৭৪,০৬৪ ৬৯,৪৭৪ ১.০১
প্লেগ ১,২৯,০৫৭ - -
ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ ৩,৫৮,৫৫৯ ৪,৭২,৮০২ ৮.০২
অন্যান্য রোগসহ মোট মৃত্যু ৬২,৭০,৬৬২ ৬২,০১,৪৩৪ -

মৃত্যু ঘটতো, ব্রিটিশ-শাসনে, জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ৫ বছর পার হবার আগেই। ২০ বছরের পর ৫০ শতাংশ আর ৬০ বছরের পরে ১৫ শতাংশ বেঁচে থাকতো। কবি ‘মৃত্যু জর্জরিত’ এবং ‘মৃত্যু তাড়িত’ সময়কে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং মৃত্যুর এই ভয়ঙ্করতা রোধ করতে তিনি আধুনিক ভারতের নেতৃবর্গের মতো বক্তৃতা মঞ্চে তাঁর ইতিকর্তব্য সারেননি। তিনি অস্বাস্থ্যের করাল রূপ শিলাইদহ, পতিসর থেকে বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে দেখেছেন এবং এর কারণ অনুসন্ধানে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় হয়েছিল - এই মৃত্যু কেবল গ্রামের মানুষের অশিক্ষা ও অজ্ঞতাজনিতই নয় - তীব্র ঔপনিবেশিক শোষণই প্রধানত এর গোঁড়ায় আছে।

মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কবির নিমগ্নতার বিষয়টি আদৌ কোনো খেয়াল নয়, এরও একটি স্তর থেকে স্তরান্তর আছে। রবীন্দ্রনাথ হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক হিসেবে একটা পরিচিতি লাভ করেন তাঁর পরিবার ও প্রজাদের সীমিত গণ্ডির মধ্যে - এটা কবির একটা প্যাসনের মতো ছিল। কিন্তু এই চিকিৎসক হয়েই তিনি, গ্রামীণ মানুষের দুর্বিষহ-অসহায় জীবনটিকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করলেন এবং উপলব্ধি করলেন যে, এই ভয়ানক রোগগুলির বিস্তার ভারতবাসীর অশিক্ষা-অপরিচ্ছন্নতা থেকে মাত্র নয়। এবং ভারতবাসীর দারিদ্র্যের কারণও তাদের অপরিণামদর্শিতা ও অত্যধিক জনসংখ্যা নয় যা ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে উপরতলার কিছু স্বদেশী বিশিষ্টদেরও যুক্তি ছিল। রবীন্দ্রনাথ রাশিয়া ভ্রমণের পর একটি চিঠিতে ভারতে জনবিস্ফোরণ প্রসঙ্গে লিখেছিলেন - ‘‘কথাটার ভিতরকার ভাবটা এই যে, বাহির থেকে যে শোষণ চলছে তা দুঃসহ হতোনা যদি স্বল্প অন্ন নিয়ে স্বল্প লোকে হাঁড়ি চেঁচে-পুছে খেত।’’ কবি জনবিস্ফোরণের তত্ত্ব খারিজ করেন ১৮৭১ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড ও ভারতবর্ষের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উল্লেখ করে। ওই সময়ে তথ্য বলছে যে, ভারতে যখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩৩ শতাংশ ইংল্যান্ডে প্রজাবৃদ্ধির হার তখন ভারতের দ্বিগুণ- ৬৬ শতাংশ। অথচ বিপুল জনবিস্ফোরণ সত্ত্বেও ইংল্যান্ডের জনজীবন ছিল স্বচ্ছন্দ। তিনি জন বিস্ফোরণের যুক্তি খণ্ডন করে দেখালেন যে, ভারতবাসীর দুঃখদুর্দশার প্রধান কারণ অন্ন সংস্থানের অভাব প্রধানত এবং তার অন্যতম মুখ্য উৎসস্থল জনসাধারণের উপর শাসকদলের নিরন্তর শোষণ।

রবীন্দ্রনাথ মানবতাবাদী, অনন্যসাধারণ তাঁর মানবিকতা। তিনি অজানা পথচারীকে ঘরে এনে যেমন চিকিৎসা করেছেন, তেমনি শিলাইদহে পূণ্যাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা হেমচন্দ্র বিদ্যারত্নকে রাত জেগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলেছেন। নিজের জমিদারি অঞ্চলে কলেরা দেখা দিলে তিনি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রও খুলেছেন, কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে কবির চিন্তার মূলে শুধু এই মানসিকতাই নয়। জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে তাঁর সুস্পষ্ট অভিমত যে, এই বিষয়টি সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িত। পল্লি প্রকৃতি দেখে তিনি মুগ্ধ, আবার তার অসহায় রোগজীর্ণমূর্তিতে তিনি ব্যথিত। ইন্দিরা দেবীচৌধুরানিকে তিনি লেখেন - ‘‘যখন গ্রামের চারদিকের জঙ্গলগুলো জলেডুবে পাতালতা গুল্ম পচতে থাকে, গোয়ালঘর ও লোকালয়ের বিবিধ আবর্জনা চারিদিকে ভেসে বেড়ায় পাট-পচানির গন্ধে বাতাস ভারাক্রান্ত, উলঙ্গ পেট-মোটা সরু রুগ্‌ণ ছেলেমেয়েরা যেখানে সেখানে জলে কাদায় মাখামাখি ঝাঁপাঝাঁপি করতে থাকে, মশার ঝাঁক স্থির জলের উপর একটি বাষ্পস্তরের মতো ঝাঁক বেঁধে ভেসে বেড়ায়, গৃহস্থের মেয়েরা ভিজে শাড়ি গায়ে জড়িয়ে বাদলায় ঠান্ডা হাওয়ায় বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে হাঁটুর উপর কাপড় তুলে জল ঠেলে ঠেলে সহিষ্ণু জন্তুর মতো ঘরকন্নার নিত্যকর্ম করে যায় - তখন সে দৃশ্য কোনোমতেই ভালো লাগে না।’’ কবি কিন্তু মানুষের এই দুরবস্থার জন্য প্রকৃতিকে দায়ী করেননি। সমাজ জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই অস্বাস্থ্যের কারণ লুকিয়ে আছে। ১৯২৩ সালে কলকাতায় ম্যালেরিয়া নিবারণী সভায় রবীন্দ্রনাথ সমাজ জীবনের প্যাটার্নের সাথে স্বাস্থ্যের সমস্যাকে যুক্ত করে বক্তব্য পেশ করেন। আধুনিকালে অর্থনীতিবিদরা স্বাস্থ্যকে মানবসম্পদে অন্তর্ভুক্ত করে, উৎপাদনের সাথে বিশেষভাবে জড়িত বলে মনে করেন স্বাস্থ্যকে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারীরাই বেশি উৎপাদন করতে পারে এবং পারে বেশি সম্পদ সৃষ্টি করতে। রবীন্দ্রনাথ স্বাস্থ্যকে সভ্যতা সৃষ্টির সঙ্গে অচ্ছেদ্য রূপে দেখেছেন। তাঁর অভিমত - ‘‘শারীরিক দুর্বলতা থেকে মানসিক দুর্বলতা আসে।... যার কেবল কোনোরকমে বেঁচে থাকা চলে, জীবনধারণের জন্য যা দরকার তার বেশি একটু উদ্বৃত্ত হয় না, তার প্রাণে বদান্যতা থাকে না। প্রাণের বদান্যতা না থাকলে বড়ো সভ্যতা সৃষ্টি হতে পারে না। যেখানে প্রাণের কৃপণতা সেখানে ক্ষুদ্রতা আসবে।’’ তাই পল্লিসমাজকে স্বনির্ভর ও সমগ্র করে গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্যকে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছেন এবং নিছক সম্পদ-সৃষ্টির তাড়নার চেয়েও স্বাস্থ্যকে কবি সমাজ-সভ্যতা গড়ার মতো আরো মহৎ, আরো বিস্তৃত প্রাঙ্গণে নিয়ে এলেন। শ্রীনিকেতন-অভিজ্ঞ, বিশিষ্ট সমাজবিদ দীক্ষিত সিংহ কবির স্বাস্থ্য-অভিমত ও কর্মযজ্ঞ অনুসরণ করে বলেছেন - কবির দৃষ্টিতে - ‘‘স্বাস্থ্যের জৈবিক অবস্থার সঙ্গে সমাজও কৃষ্টির দ্বারা প্রভাবিত মনোভঙ্গিও জড়িত। স্বাস্থ্য-সমাজ-অর্থনীতি-সমাজ এই যে বৃত্ত আছে সেই বৃত্তকে রবীন্দ্রনাথ আরও এক আধুনিক দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন - ‘‘আমাদের দেশে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পায় অতি অল্প লোক, বাকি বারো আনা লোক আধপেটা খেয়ে ভাগ্যকে দায়ী করে এবং জীবিকার কৃপণ পথ থেকে মৃত্যুর উদার পথে সরে পড়তে দেরি করে না। এর থেকে যে নির্জীবতা সৃষ্টি হয়েছে তার পরিমাণ কেবল মৃত্যু সংখ্যার তালিকা দিয়ে নিরূপিত হতে পারে না।’’

স্বাস্থ্য এবং ব্যাধির আক্রমণের যে আর্থিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক আছে রবীন্দ্রনাথ এই ভাবনাকেই তাঁর শ্রীনিকেতনে নানাভাবে অনূদিত করেছেন। ১৯২২-এ রবীন্দ্রনাথ যখন এই স্বাস্থ্য উন্নতির কাজে নামেন, ব্রিটিশ শাসকরা তখন কেবল নিজেদের এবং খুব বেশি হলে সেনাবাহিনীর স্বাস্থ্য নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে - গ্রামের তো প্রশ্নই আসে না। তবুও, উনিশ শতকের শেষে তারা কিছুটা নজর দেয় জনস্বাস্থ্যের দিকে এবং উপলব্ধি করে যে, শ্রমিক ও বৃহত্তর সমাজ, এবং তার পরিবেশসহ সুস্বাস্থ্যের ব্যবস্থা না হলে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্রমোন্নতি সম্ভব নয়।

বর্তমান ভারত সরকার সম্ভবত তার স্বদেশ উন্নয়নের ভাবনায় ঔপনিবেশিক শাসকের এই বোধোদয়কেও ব্রাত্য করে রেখেছে। করোনো মহামারী আজ (২০ মে)পর্যন্ত সরকারি হিসেবে ২,৮৭,১২২ জনের প্রাণ কেড়েছে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের অপেক্ষায় মানুষ কম্পমান। বহু আকাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিন এলেও, তা এ পর্যন্ত মাত্র ১৭ শতাংশ দেশবাসী নিতে পেরেছে। একটা অঙ্গরাজ্যের সিংহাসন সংগ্রহ করার অভিযানে মত্ত হয়ে ভ্যাকসিন সংগ্রহের মতো ‘তুচ্ছ’ জিনিসের প্রতি নজর দিতে পারেনি দেশনেতারা - পারেনি, সময় পেয়েও অক্সিজেনের অভাব, হাসপাতালে বেডের অভাব, ভেন্টিলেটরের অভাব দূর করতে। দেশ গরিব, তাই ২০ হাজার কোটি টাকার সেন্ট্রাল ভিস্তা তৈরির স্বপ্নে প্রধানমন্ত্রী মশগুল। একইরকমভাবে, রাজ্যের শাসক দল সিংহাসন দখলে রাখতে করোনাকে মানুষকে প্রাণ দখল করতে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে। বিশ শতকের গোড়ায় কলেরা-বসন্ত-প্লেগের দাপটে জীবনের ধ্বংসলীলা দেখে কবি যা বলেছিলেন, আজ একুশ শতকের ডিজিটাল ভারতে দাঁড়িয়ে তাঁকে বোধহয় সংশোধন করতে হতো না - ‘‘নিরুৎসাহ, অবসাদ, অকর্মণ্যতা, রোগ প্রবণতা মেপে দেখবার প্রত্যক্ষ মানদণ্ড যদি থাকত তাহলে দেখতে পেতাম এদেশে এক প্রান্ত জুড়ে প্রাণকে ব্যঙ্গ করেছে মৃত্যু, সে অতি কুৎসিত দৃশ্য, অত্যন্ত শোচনীয়। কোনো স্বাধীন সভ্য দেশ মৃত্যুর এরকম সর্বনেশে নাট্যলীলা নিশ্চেষ্টভাবে স্বীকার করতেই পারে না।’’

কিন্তু ভারতবাসীকে প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে, হাসপাতালের মেঝেয় শুয়ে মুমূর্ষু রোগী, চুল্লির অভাবে, অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে অসংখ্য লাশ গাদা করা। গঙ্গা-যমুনায় শব ভেসে চলেছে, আকাশে শকুন উড়ছে, নীচে কুকুর ছিঁড়ে খাচ্ছে লাশ। কারণ স্বাস্থ্যের মতো ফালতু বিষয়ে মাথা দেবার কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনো শাসকেরই সময়ও নেই - পরিকল্পনাও নেই অর্থবরাদ্দও নেই। শাসকেরা জনগণের অভিভাবক, তাই জনগণ কি করবে তাই বলেই ওদের দায়িত্ব খালাস। ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ার হুঁশ ওদের হয়নি শিয়রে শমন জেনেও। ওরা ভোট চায়, মানুষকে নয়।

শাসনে এদের মন নেই, শোষণে এদের মন। তাই, রবীন্দ্রনাথকেও ব্রিটিশ শাসনে ‘অন্ন চাই, প্রাণ চাই’ বলে চীৎকার করতে হয়েছে, যেমন আজ তাঁর মৃত্যুর প্রায় শতবর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও ভারতবাসীকে সুস্থ-সবল জীবনের জন্য দাবির মিছিলে পা মেলাতে হচ্ছে। রাষ্ট্র কয়েকজন শাসকের নয়, রাষ্ট্র দেশবাসীর। দেশবাসীর মৌলিক অধিকার বেঁচে থাকা এবং খাদ্য-পানীয়-আলো-হাওয়ার মতো উপকরণগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে লাভ করা, না হলে আদায় করে আনা। শ্রীনিকেতনসহ গ্রাম পুনর্গঠনে রবীন্দ্রনাথের অন্যতম কাণ্ডারি কালীমোহন ঘোষ শান্তিনিকেতন পত্রিকায়, প্রাচীন ভারতে শ্রমজীবী সমস্যায় দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের শ্লোক ‘উপযুক্ত মানুষ’ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন - ‘‘এমন কোনো অক্ষর নাই যাহা মন্ত্র নহে, এমন কোনো মূল নাই, যাহা ঔষধ নহে, এবং এমন কোনো পুরুষ নাই যাহা অযোগ্য। কেবল তাহাকে যথাযথভাবে নিয়োগ করিবার উপযুক্ত লোকই দুর্লভ।’’

সেই উপযুক্ত শাসকই দুর্লভ আজ রাজ্যে এবং রাষ্ট্রে। রবীন্দ্রনাথ মানুষের প্রতিকারহীন পরাভয়ে কখনও বিশ্বাস করেননি। তিনি বলেছেন, দুর্বল একদিন জয়ী হবে। ‘‘সমবায়ের শক্তি দিয়ে আমাদের দেশে সেই আগমনি সূচিত হচ্ছে।’’ দেশে এখন কে শ্রেষ্ঠ তার বড়াই চলছে-আর অনুগ্রহ অনুদানে জনতুষ্টির খেলা চলছে। মহামারী থকে পরিত্রাণের উপায় আজও সেই মানুষের শক্তিতে যাদের বিশ্বাস, ইচ্ছার ও শক্তির সমবায়কে যারা সম্মান করে সেই বাম ও তাদের সহগামী-অনুগামীরাই অতিমারীর অন্ধকার পার করে - আলোর সকাল আনতে পারবে, যখন পীড়িত মানুষ করবে আলোক স্নান। তাই মহামারীর কাল সমুদ্র পার হতে - মাভৈঃ বলে তরি ভাসাতেই হবে সকলের সম্মিলিত শক্তিতে। এই মারের সাগর পাড়ি দিতে বামেদেরই আছে ‘ভয়-ভাঙা নাও’ আর তারই ছেঁড়া পালে আছে অমিত শক্তি, আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু দানে।