E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪০ সংখ্যা / ২১ মে, ২০২১ / ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮

রাজ্য সরকারের সার্বিক ব্যর্থতায় পশ্চিমবঙ্গের কোভিড পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা লকডাউন পর্বেও সামলে উঠতে পারল না পশ্চিমবঙ্গের সরকার। টিকাকরণ এবং টেস্ট এই দুই প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ভর করে মৃত্যু মিছিল ঠেকানো তো দূরের কথা, রাজ্যে সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের হেফাজত থেকে প্রতিষেধক টিকা চুরির মতো ঘটনাও এখন সামনে আসছে, যা ‘অনুপ্রেরণা’য় ভরপুর সংবাদ মাধ্যমও চেপে রাখতে পারছে না। শত অভিযোগ এবং হাহাকার সত্ত্বেও অক্সিজেন, শয্যা, ওষুধ না পাওয়ার মতো পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টিকাকরণের নামে স্বজনপোষণের ও হাসপাতাল থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগী উধাও হয়ে যাবার মতো অভিযোগ। আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী যখন দাগী অভিযুক্তদের ছাড়াতে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা সিবিআই দপ্তরে বসে থাকছেন, তখন লাল স্বেচ্ছাসেবক বা রেড ভলান্টিয়াররাই সংক্রমণের ভয়কে উপেক্ষা করে, লাইট হাউসের মতো রয়েছেন অসহায় মানুষের পাশেই।

পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃতের সংখ্যা আবার বেড়ে গেল। ২০মে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬২। যা দু'সপ্তাহ আগে ছিল ১১৭। বৃদ্ধি ঘটেছে আক্রান্তের সংখ্যায়। গত দুই সপ্তাহের তুলনায় ২৪ ঘন্টার নিরিখে দাঁড়িয়েছে ১৯,০৯১ (গত দু'সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৮,৪৩১)। মোট সংক্রমণের নিরিখে মৃত্যুর হার ১.১৫ শতাংশ। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ শতাংশ।

টিকা নিয়ে চলছে কালোবাজারি। অক্সিজেন সিলিন্ডার সাধারণ মানুষ কিনছেন এমনকি দশ গুণ বেশি দামেও। সরকারি বেসরকারি কোনও হাসপাতালেই ঘোষিত সংখ্যার সঙ্গে মিল নেই প্রকৃত পরিস্থিতির। এই আবহে রাজ্য সরকার টিকাকরণের জন্য কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন মিলিয়ে জরুরী ভিত্তিতে ১৮ লক্ষ প্রতিষেধক কেনার জন্য প্রাথমিকভাবে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। মোট তিন কোটি প্রতিষেধক কিনতে চায় পশ্চিমবঙ্গ। তবে কত প্রতিষেধক এ পর্যন্ত মিলেছে তার সঠিক ঘোষণা এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে করা হয়নি। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, জুন মাস নাগাদ বাকি প্রতিষেধক পৌঁছতে পারে রাজ্যে বলে আশা করছে স্বাস্থ্য দপ্তর। এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে ঘটেছে প্রতিষেধক চুরির মতো ঘটনাও। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে ১৬টি কোভ্যাকসিনের ভায়াল চুরি হয়েছে। অর্থাৎ ১৬০টি ডোজ চুরি গেছে স্বাস্থ্য দপ্তরের গাফিলতিতে। যথারীতি এই চুরি প্রসঙ্গে চুপ প্রশাসন।

এদিকে টাকার বিনিময়ে টিকাকরণের অভিযোগও উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই ব্যাপক দুর্নীতিতে টিকা থেকে বাদ পড়ছেন প্রকৃত শ্রমিক- হকাররা। অভিযোগ, প্রকৃত হকার ও শ্রমিকদের টিকাকরণের তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে সেই স্থানে সম্ভ্রান্ত, ধনী পরিবারের সদস্য থেকে বড় ব্যাবসায়ীদের টাকার বিনিময়ে টিকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাই পৌরসভায়। ১৯ মে তৃণমূলের পৌরসভার প্রধান দূর্গাশঙ্কর পানকে পৌরসভার গেটের মুখে ঘিরে ধরে বিক্ষোভে সোচ্চার হন এলাকার  পরিবহণ শ্রমিক ও হকাররা। তাঁর কাছে চাওয়া হয় কৈফিয়ত। প্রতিবাদী শ্রমিক ও হকারদের বক্তব্য, পৌরসভায় ১২১ জন হকারের লাইসেন্স আছে। এছাড়াও রাস্তার ধারে আরও বহুজনের ছোটখাটো ব্যবসা রয়েছে। টিকাকরণের তালিকাতে আমাদের নাম নেই। শাসক দলের নেতৃত্বে হয়েছে স্বজনপোষণ। মাত্র ৩৯ জন হকারের নাম রয়েছে টিকার তালিকায়। বাকি সব নাম টাকার বিনিময়ে যুক্ত করা হয়েছে। দাবি ওঠে, সমস্ত বঞ্চিত হকারের নাম নথিভুক্ত করে প্রকাশ করে তাঁদের টিকাকরণের সময়সূচি জানাতে হবে।

২০ মে জলপাইগুড়িতেও একই অভিযোগ ওঠে। জলপাইগুড়ি পৌরসভার প্রয়াস হলে টিকাদান প্রক্রিয়া চলার সময় সেখানে গিয়ে দেখা যায় একজন হকার বা পরিবহণকর্মী কেউ লাইনে নেই। তার বদলে তৃণমূলের দলীয় সমর্থক কর্মীদের হকার, দোকানদার, পরিবহণকর্মী সাজিয়ে টিকাকরণ চলছে।

অন্যদিকে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মী সহ শিক্ষক ব্যাঙ্ক কর্মী পুলিশ সহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে সুপার স্প্লেন্ডার হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের টিকার অগ্রাধিকার গ্রুপে রাখা রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কারণ সময়ের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় ডোজ দেরিতে হলে সমস্যা নেই এমন একটি বার্তা দিতে চাইছে রাজ্য সরকার।

লকডাউন শুরু হওয়ার পর রাজ্যের বড়ো অংশের মানুষ আর্থিক সঙ্কটের পড়েছেন। কাজ না থাকায় বা রুজির খোঁজে বেরোতে না পারায় বেড়েছে তাঁদের অসহায়তা। এই দুর্দিনে রাজ্যজুড়ে ৫ টাকায় পেট ভরানোর ‘মা ক্যান্টিন প্রকল্প’ এখন নামেমাত্র চালু রয়েছে। রাস্তার ধারে মুখ্যমন্ত্রী ছবি দেওয়া কিয়স্ক বন্ধ অধিকাংশ জায়গায়। তবু ক্যান্টিনের সামনে রোজগারহীন ক্ষুধার্ত মানুষ খালি পেটে এক বুক আশা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ১০০ কোটি টাকার প্রকল্পের পাততাড়ি এভাবে চুপিসাড়ে কি বন্ধ করে দেওয়া হলো নাকি আগাগোড়া ভোটমুখী ভাঁওতা ছিল এই প্রকল্প তা নিয়ে এবং খরচের হিসেব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এই অসহায় মানুষদের পাশেও সীমিত ক্ষমতা নিয়ে একদিকে সংক্রমিত ব্যক্তিকে সহায়তা, অন্যদিকে রোজগারহীন মানুষের মুখে দু’মুঠো তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা - সাধ্যর মতো করে চলেছেন বামপন্থীরা। কোথাও কোথাও হোম আইসোলেশনে থাকা পরিবারের হাতে নামমাত্র অনুদানে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিচ্ছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। যাদবপুরে বামপন্থীদের উদ্যোগে পরিচালিত জ্যোতি দেবী শ্রমজীবী ক্যান্টিন পেরিয়েছে চারশো দিন। এখান থেকে এখনও প্রতিদিন পাঁচশোর বেশি মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে রান্না করা পুষ্টিকর খাবার।